সংবাদ প্রবাহ ডেস্ক : সাভারের বামনী খাল রক্ষায় তিনটি হাউজিং কোম্পানির ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা। চান্দুলিয়া, কণ্ডা এবং কান্দিবলিয়ারপুর মৌজার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ‘বামনী খাল’ রক্ষায় তিনটি আবাসন প্রকল্পের মাটি ভরাটসহ সব কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন হাইকোর্ট। সেখানে জম জম নূর সিটি, এস এ হাউজিং এবং সুগন্ধা হাউজিং অনুমোদনহীনভাবে এ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলো। একই সঙ্গে এ তিন আবাসন কোম্পনি দ্বারা এরইমধ্যে কী পরিমাণ জমি ভরাট করা হয়েছে, সে বিষয়ে রাজউক, পাউবো এবং ঢাকার ডিসিকে আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। রুলে ৩ আবাসনের মাটি ভরাট থেকে বামনী খাল এবং খাল সংলগ্ন জলাশয় ও কৃষিজমি রক্ষা ও সংরক্ষণে বিবাদীগণের ব্যর্থতা সংবিধান ও দেশে প্রচলিত আইনের পরিপন্থী বিধায় কেন তা অবৈধ, জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত। পাশাপাশি রুলে আইন ও বিধি অনুযায়ী বামনী খাল, খাল সংলগ্ন জলাশয় ও কৃষিজমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং খাল সংরক্ষণে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের শুনানি শেষে রোববার (১৪ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), নিজেরা করি, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ), আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক), ব্লাস্ট এবং নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খানের দায়েরকৃত রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী শামিমা নাসরিন ও এস. হাসানুল বান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার চান্দুলিয়া মৌজার আরএস দাগ নং ১, ৭০; কণ্ডা মৌজার আরএস দাগ নং ৩৬৫, ৩৯০ এবং কান্দি বলিয়ারপুর মৌজার আরএস দাগ নং ৫ খাল হিসেবে চিহ্নিত। স্থানীয় এলাকাবাসীর নিকট উল্লিখিত দাগে অবস্থিত খালটি ‘বামনী খাল’ হিসেবে পরিচিত। প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খাল এক সময় কর্ণপাড়া খাল ও তুরাগ নদীর সংযোগ খাল হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করতো। স্থানীয় কৃষি ও মৎস্য উৎপাদনেও এ খালের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে এ খাল মারাত্মক অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এ খাল ভরাটকারীদের শীর্ষে রয়েছে জম জম নূর সিটি, এস এ হাউজিং এবং সুগন্ধা হাউজিং লিমিটেড। বিভিন্ন সময় প্রকাশিত সংবাদ ও প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায় এ তিনটি হাউজিং খাল ও খালের আশেপাশের জলাধার, নালজমি ও কৃষিজমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা কোন ধরনের আইনগত বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও পরিবেশগত ছাড়পত্র না নিয়ে জলাশয় ও কৃষি জমি ভরাট করে আসছিল।
তিন আবাসন কোম্পানির এসব কার্যক্রম বন্ধে এবং বামনী খাল সংরক্ষণে বেলাসহ ছয়টি পরিবেশবাদী সংগঠন ও একজন ব্যক্তি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় গত বছর এ রিট দায়ের করেন। রিটে ভূমি সচিব, কৃষি সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, পরিবেশ, বন সচিব, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মহাপরিচালক, ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক (ভিসি), ঢাকার পুলিশ সুপার, রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, সাভার উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), ঢাকা জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের, উপপরিচালক, সাভারের সহকারী কমিশনার (ভূমি), জম জম নূর সিটি, এস এ হাউজিং এবং সুগন্ধা হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
Leave a Reply