স্টাফ রিপোর্টার : সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বুক জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে হকাররা। জনদূর্ভোগ উপেক্ষা করে উত্তরবঙ্গগামী গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কের অন্তত ১০টি স্পটে সহস্রাধীক দোকান বসিয়ে দেদারসে ব্যবসা করে যাচ্ছে তারা। সার্ভিস লেনসহ ফুটপাত দখল করে দিনের পর দিন এসব ব্যবসা পরিচালনা করে আসলেও যানজট থেকে মুক্তি পাচ্ছে না মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীরা। এসব হকারদের কাছ থেকে মাসে কোটি টাকা চাদাঁবাজি হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাদাঁবাজির এ টাকার ভাগ পায় স্থানীয় প্রভাবশালীরাও। তবে ঢাকা জেলা পুলিশের দাবী নিজেদের সচেতনতা বৃদ্ধি না পেলে এ থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব না। এ লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাসষ্টান্ডের সার্ভিস লেন ও ফুটপাত এখন হকারদের দখলে। সাভার বাজার বাসষ্টান্ডের দুই’পাশের ফুটপাতে রয়েছে প্রায় দুই হাজার ছোট-বড় দোকান। এগুলোর পৃষ্টপোষকতায় রয়েছে হকার্সলীগের নেতারা। প্রত্যেক দোকান থেকে দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস চুক্তিতে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে ১৫০-১০হাজার টাকা। শুধু সাভার বাজার বাসষ্ট্যান্ডই নয়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, উলাইল, গেন্ডা, রেডিওকলোনী, নবীনগরসহ আশুলিয়ার বিভিন্ন বাসষ্ট্যান্ডে হকাররা দখল করে বসে আছে ফুটপাতসহ সার্ভিস লেনের অনেকটা। শিল্পাঞ্চল সাভারে প্রতিদিন লাখো মানুষের চলাচল রয়েছে। হকারদের কারনে সার্ভিস লেন ও ফুটপাত দিয়ে সাধারন জনগনের চলাচল যেমন বিঘ্ন হচ্ছে, তেমনি চুরি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডও বেড়ে গেছে। এছাড়াও প্রত্যেকটি ওভার ব্রিজের অর্ধেকটা দখল করে নিয়েছে হকাররা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাভারে মহাসড়কের একাংশ ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা আয় করছে একটি চক্র। রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে নিরবে চলছে এ চাঁদাবাজি। শুধু মহাসড়কই নয়, ফুটপাত সম্পূর্ণ দখল করে রেখেছে সংঘবদ্ধ এ হকার চক্রের সদস্যরা। বিষয়টির পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টারও অবগত রয়েছেন বলে জানা গেছে। মাঝে মাঝে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝটিকা অভিযান চালানো হলেও ফের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায় মহাসড়কের রুপ।
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাভার বাসস্ট্যান্ডসহ হকারদের দখলে থাকা বাসষ্ট্যান্ডগুলো একটি জনবহুল এলাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই এলাকায় ফুটপাত দখল করে হকারদের ভ্রাম্যমাণ দোকান চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। মহাসড়ক ৮ লেনে উন্নীত হওয়ার পরে হকারদের কাছে দখল হয়ে গেছে তার অংশ বিশেষ। বাহারী দোকান রয়েছে এই ফুটপাত ও মহাসড়কে। তৈরি পোশাক, স্টেশনারী, কাঁচাবাজার, মাছের বাজার, চায়ের দোকান, খাবার ও ফলের দোকান।
জনবহুল এলাকায় একজন ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী সব দোকানই রয়েছে ফুটপাত ও মহাসড়কে। বিভিন্ন সময় পুলিশ ফুটপাতে অভিযান পরিচালনা করলেও সংঘবদ্ধ চক্রের কারণে কালের পরিক্রমায় সকল অভিযানই শেষ মেষ ব্যর্থতায় রুপ নিয়েছে।
সম্প্রতি ফুটপাত দখলমুক্ত করার সময় সংঘব্ধ হকারদের রোষানলে পড়ে পুলিশ বাহিনী। হকাররা এ সময় মহাসড়ক অবরোধ করে রাখলে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে বিষয়টির সুরাহা হয়। এরপর থেকেই কার্যত মহাসড়কে ও ফুটপাতে পুলিশী অভিযান স্থগিত হয়ে যায়।
সাগর মিয়া, রমজান আলীসহ ভুক্তভোগী পথচারীরা জানান, মহাসড়ক ও ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারীরা। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে বড় বড় মার্কেট ও বিপণী বিতানগুলো প্রতিমাসে ক্ষতি গুনছে হকারদের কারণে। ফুটপাতে সব ধরনের পণ্য বিক্রি হওয়ায় খদ্দেররাও মার্কেটে প্রবেশ না করে ফুটপাত থেকেই কেনাকাটা করে নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফুটপাতের একাধিক সাধারণ হকার জানান, ফুটপাতে দোকান ভেদে বাসস্ট্যান্ডের হকার্স লীগ নেতাদের অগ্রিম দিতে হয় ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এরপর প্রতিদিন একটি দোকান থেকে চাঁদা আদায় করা হয় ১৫০ থেকে ২শ’ টাকা পর্যান্ত। সপ্তাহ, মাসিক হারেও চাদাঁ দিতে হয় সাধারন হকারদের। এভাবে মহাসড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় কোটি টাকা চাদাঁ আদায় হয় বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। যার ভাগ পেয়ে থাকেন প্রভাবশালীরা।
সাভারের নবীনগর, রেডিও কলোনী, বাজার বাসষ্ট্যান্ড, গেন্ডা থেকে ওলাইল, আমিনবাজার ও হেমায়েতপুরের সকল ফুটপাত ও মহাসড়কের একই চিত্র যা সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে। একেক অংশের নিয়ন্ত্রন রয়েছে একেকজনের। এতে করে ক্ষীণ হয়ে গেছে মহাসড়ক। প্রতিনিয়ত যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হচ্ছে। ঘটছে দুর্ঘটনা।
সাভার পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল গনি জানান, আমিও সাধারণ হকারদের পক্ষে। কেউ চাদাঁবাজি করলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। আমি আমার পক্ষ থেকে প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগীতা করবো। হকারদের কারনে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় বলেও জানান তিনি।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি জানান, পুলিশ প্রশাসন সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধে জিরো টলারেন্স। আমরা মাঝে মাঝেই অভিযান পরিচালনা করি। তবে এসব বন্ধে সচতেন মহলকেও এগিয়ে আসতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলেই ফুটপাত হকারমুক্ত হবে বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply