অনলাইন ডেক্স : বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা কাল লিওনেল মেসিকে বিশ্রামে রেখেছিল। কিন্তু কনমেবল অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ১০ জনের বলিভিয়াকে সহজেই ৩-০ গোলে পরাজিত করতে কোন কার্পণ্য করেনি মেসির সতীর্থরা। এর মাধ্যমে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
দিনের আরেক ম্যাচে মার্সেলো বিয়েসলার উরুগুয়ে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত ইকুয়েডরের কাছে ২-১ গোলে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। এদিকে ৯০ মিনিটে মারকুইনহোসের গোলে লিমায় স্বাগতিক পেরুর বিপক্ষে কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এর মাধ্যমে দুই ম্যাচে সম্ভাব্য ছয় পয়েন্ট নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বাছাইপর্বে শীর্ষে রয়েছে সেলেসাওরা।
ইন্টার মিয়ামির হয়ে ক্লাব ফুটবলে ব্যস্ত সময় কাটানো মেসি বেঞ্চে বসে কাল আর্জেন্টিনার খেলা উপভোগ করেছেন। বদলী হিসেবেও তিনি দলে ছিলেন না। এর আগে বৃহস্পতিবার ইকুয়েডরের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে জয়সূচক গোল করা মেসি নিজেকে পরিশ্রান্ত দাবী করায় কোচ লিওনেল স্কালোনিকে তাকে বিশ্রামে রেখেছিলেন। কিন্তু মেসিকে ছাড়াও যে দাপুটে জয় সম্ভব তারই প্রমান আরো একবার দিল স্কালোনির শিষ্যরা। এনজো ফার্নান্দেজ, নিকোলাস টাগলিয়াফিকো ও নিকোলাস গঞ্জালেজের গোলে আর্জেন্টিনার বড় জয় নিশ্চিত হয়।
চেলসি মিডফিল্ডার ফার্নান্দেজ শুরুতেই ৩০ গজ দুর থেকে যে শক্তিশালী শটটি নিয়েছিলেন বলিভিয়ান গোলরক্ষক গুইলারমো ভিসকারা কর্ণারের মাধ্যমে কোনমতে রক্ষা না করলে তখনই হয়তো এগিয়ে যেতে পারতো আর্জেন্টাইনরা। এরপর পোস্টের খুব কাছে থেকে জুলিয়ান আলভারেজকে হতাশ করেন ভিসকারা। কিন্তু ৩১ মিনিটে আর শেষ রক্ষা হয়নি। আলভারেজের কাছ থেকে বল নিয়ে এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার লো ক্রসে ফার্নান্দেজ নিখুঁত শটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন। আট মিনিট পর ক্রিস্টিয়ান রোমেরোকে বাজেভাবে ট্যাকলের অপরাধে লাল কার্ড দেখে মাঠ ত্যাগ করেন রবার্তো ফার্নান্দেজ। যে কারনে আর্জেন্টিনাকে প্রতিরোধ করা আরো কঠিন হয়ে পড়ে। ৪২ মিনিটে ডি মারিয়ার ফ্লোটেড ফ্রি-কিক থেকে টাগলিয়াফিকো হেডের সাহায্যে ভিসকারাকে পরাস্ত করে ব্যবধান দ্বিগুন করেন।
বিরতির পর পুরো ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিজেদের করে নেয় তিনবারের বিশ^ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা । ৭০ মিনিটে আলভারেজের শট বারে লেগে ফেরত আসে। রডরিগো ডি পল ও ডি মারিয়াদের সামলাতে ভিসকারাকে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। ম্যাচ শেষের ৭ মিনিট আগে ফার্নান্দেজ প্রতিপক্ষ রক্ষনভাগের ভুলে সুযোগে আর্জেন্টিনাকে তৃতীয় গোল উপহার দেন। এনিয়ে বলিভিয়া বাছাইপর্বের দুই ম্যাচে দুটিতেই পরাজিত হলো। প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলের কাছে তারা ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল।
দলের পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট স্কালোনি বলেছেন, ‘আজকের ম্যাচে করো মধ্যে কোন ধরনের শঙ্কা কাজ করেনি। লিও আজকের জন্য প্রস্তুত ছিলনা। নিজেকে পরিশ্রান্ত দাবী করায় তাকে বিশ্রামে রাখা হয়। এই মুহূর্তে খুব একটা স্বস্তি সে অনুভব করছে না।’
এদিকে কিটোতে আর্জেন্টাইন কোচ বিয়েসলা উরুগুয়ের দায়িত্বে শুরুটা দুর্দান্ত করার পর প্রথম হারের স্বাদ পেয়েছেন। ইকুয়েডর ডিফেন্ডার ফেলিক্স তোরেসের জোড়া গোলে কাল উরুগুয়ের হার নিশ্চিত হয়। ৩৮ মিনিটে ম্যাক্সিমিলিয়ানো আরাউজোর কাছ থেকে পাস নিয়ে অগাস্টিন কানোবিও উরুগুয়েকে এগিয়ে দেন। কিন্তু বিরতির ঠিক আগে মোয়িসেস কাইসেডোর ক্রসে ফেলিক্স তোরেসের শক্তিশালী শটে সমতায় ফিরে স্বাগতিকরা। ৫১ মিনিটে পেনাল্টির সুযোগ হাতছাড়া করেন ইকুয়েডরের অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার এনার ভ্যালেন্সিয়া। কিন্তু ডিফেন্ডার তোরেস দলের গুরুত্বপূর্ণ জয়ে কোন ভুল করেননি। ১৬ বছর বয়সী কেন্ড্রি পায়েজের লো ক্রসে স্লাইডিং শটে ৬১ মিনিটে তোরেস ইকুয়েডরকে এগিয়ে দেন। এই গোলেই শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ইকুয়েডর।
লিমায় স্বাগতিক অপ্রতিরোধ্য পেরুর বিরুদ্ধে ব্রাজিল কোনভাবেই গোল আদায় করে নিতে পারছিলনা। ৭২ মিনিটে রাফিনহার শট দুর্দান্ত ভাবে রুখে দেন পেরুর গোলরক্ষক পেড্রো গালেসে। এতে আরো বেশী হতাশা নেমে আসে ব্রাজিল শিবিরে। কিন্তু শেষ মিনিটে নেইমারের কর্ণার থেকে মারকুইনহোসের হেডের গোলে শেষ পর্যন্ত স্বস্তির জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা।
সান্তিয়াগোতে চিলির সাথে গোলশুণ্য ড্র করে পয়েন্ট হারিয়েছে কলম্বিয়া। মূল দলে ফেরা অভিজ্ঞ স্ট্রাইকার এ্যালেক্সিস সানচেজও চিলিকে কোন সুখবর দিতে পারেননি।
দিনের আরেক ম্যাচে শেষ মুহূর্তের গোলে প্যারাগুয়েকে ১-০ ব্যবধানে পরাজিত করেছে ভেনেজুয়েলা। এর আগে ৭৮ মিনিটে জেফারসন সাভারিনোর ক্রসে ইয়ানগেল হেরেরা গোল করে ভেনেজুয়েলাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু রেফারি মনিটরে পরীক্ষা করে হ্যান্ডবলের কারনে তা বাতিল করে দেন। কিন্তু স্টপেজ টাইমে টেকনোলজি ভেনেজুয়েলার পক্ষে কাজ করে। প্যারাগুয়ের ডিফেন্ডার ইভান পেরিসের হ্যান্ডবলে পেনাল্টি উপহার পায় ভেনেজুয়েলা। সালোমোন রন্ডন স্পট কিক থেকে স্বাগতিকদের স্বস্তিদায়ক জয় উপহার দেন।
এই জয়ে প্রথমবারের মত বিশ^কাপের ইতিহাসে ভেনেজুয়েলার অংশগ্রহনের আশা টিকে থাকলো। ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে বর্ধিত কলেবরে ৪৮ দল নিয়ে বিশ^কাপ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হওয়ায় দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে সরাসরি খেলতে পারবে ছয়টি দল। এর আগে এই দলের সংখ্যা ছিল চারটি। ১০ দলের বাছাইপর্বে সপ্তম দলটি আন্ত:-মহাদেশীয় প্লে-অফে অংশ নিবে।
Leave a Reply